ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪

মগনামা ইউপি চেয়ারম্যানের সেই জেটি উচ্ছেদে উদ্যোগ নিচ্ছে বন বিভাগ

মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া ::কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার মগনামা লঞ্চঘাটের সাথে লাগোয়া দক্ষিণ পাশে সরকারী জায়গা-জবর দখল করে স্থানীয় প্রবভাবশালী ক্ষমতাধর ইউপি চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ চৌধুরী ওয়াসিম কর্তৃক গত এক বছর পূর্বে অবৈধভাবে নির্মিত তাঁর ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্টানের লোহার জেটিটি অবশেষে উচ্ছেদের উদ্যোগ নিচ্ছে বন বিভাগ। চেয়ারম্যানের অবৈধ লোহার জেটিটি উচ্ছেদে উদ্যোগ গ্রহণ করায় বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাধুবাদ জানিয়েছেন মগনামার সর্বস্থরের জনসাধরন।

মগনামার চেয়ারম্যান ওয়াসিম কর্তৃক নির্মিত তার ব্যক্তিগত প্রতিষ্টানের লোহার জেটিটি শিগগির উচ্ছেদে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়ে উপকূলীয় বন বিভাগের মগনামা-চনুয়া রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা জুয়েল চৌধুরী এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘মগনামা ইউপি চেয়ারম্যান ওয়াসিম লঞ্চঘাটের দক্ষিণ পাশে সরকারী খাস জায়গা ও উপকূলীয় বন বিভাগের জায়গা জবর-দখল করে ব্যক্তিগত প্রতিষ্টানের জেটি তৈরী করার প্রসঙ্গটি বন বিভাগ অবগত রয়েছে। উর্দ্ধতন প্রশাসনের সাথে আলাপ-আলোচনা করে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে চেয়ারম্যানের অবৈধ জেটিটি উচ্ছেদে আইনগত কার্যক্রম শুরু করবে বন বিভাগ। সরকারী জায়গা জবরদখলকারী কাউকে পরোয়ানা করেনা বন বিভাগ। দখলবাজ চক্র যতই শক্তিশালী হোক, সরকারী সম্পদ রক্ষার্থে বন বিভাগ এ ব্যাপারে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ ক্ষেত্রে কোন দখলবাজকে ছাড় দেওয়া হবেনা।

সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, গত এক বছর পূর্বে চট্টগ্রাম উপকূলীয় বনবিভাগের অধীন মগনামা বনবিট কার্যালয়ের মাত্র দুইশত গজ অদূরে সংরক্ষিত প্যারাবন উজাড় করে, বনের জায়গা ও সরকার খাস জায়গা জবর দখল করে জেটি নির্মাণ করেছেন মগনামা ইউনিয়নের প্রভাবশালী ক্ষমতাধর ইউপি চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ চৌধুরী ওয়াসিম! চেয়ারম্যান তাঁর বরফ মিলের উৎপাদিত বরফ ওই জেটিটি দিয়ে বিভিন্ন ফিশিং ট্রলারে সরবরাহ করে থাকে। সরকারী জায়গায় অবৈধ জেটিটি নির্মাণের এক বছর পেরিয়ে গেলেও চেয়ারম্যান ওয়াসিম স্থাণীয়ভাবে প্রভাবশালী ও ব্যাপক ক্ষমতাধর হওয়ায় এ ভয়ে স্থানীয় প্রশাসনসহ বন বিভাগের কর্মকর্তারা জেটিটি উচ্ছেদের জন্য কোন কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। কিন্তু সম্প্রতি একাধিক জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে বন বিভাগের জায়গায় চেয়ারম্যান ওয়াসিম কর্তৃক জেটি নির্মাণের সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বন বিভাগ ও প্রশাসনে টনক নড়ে। উপকূলীয় বন বিভাগেরও বিশেষ নজরে আসে। অবশেষে চেয়ারম্যানের ওয়াসিমের সেই অবৈধ জেটি উচ্ছেদের উদ্যোগ নিয়েছে উপকূলীয় বন বিভাগের অধীন মগনামা বনবিট কার্যালয়।

অভিযোগ উঠেছে, মগনামা লঞ্চঘাটের দক্ষিণ পাশে উপকূলীয় বনবিভাগের সৃজন করা প্যারাবন উজাড় করে আড়াই শত ফুট দৈর্ঘ্যের লোহার জেটিটি তৈরী করা হয়। জেটির উপরের প্রান্তে ইউপি চেয়ারম্যানের মালিকানাধীন মেসার্স শামীমা এন্ড আমিলা আইস ফ্যাক্টরির অবস্থান। এ প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত বরফ ফিশিং ট্রলারে সরবরাহ করতে মূলত জেটিটি নির্মাণ করা হয়েছে। চার ফুট প্রস্থের এ জেটি নির্মাণে উজাড় করা হয়েছে অন্তত কয়ে’শ বাইন গাছ। এছাড়াও বরফ সংগ্রহ করতে আসা শত শত ফিশিং ট্রলার ভিড়ছে প্যারাবনে। এতে প্যারাবনের বাইন ও কেওড়া গাছের ক্ষতি হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মকছুদ মিয়া অভিযোগ করে বলেন, মেসার্স শামীমা এন্ড আমিলা আইস ফ্যাক্টরির মালিক মগনামার চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম প্রভাব বিস্তার করে বনবিভাগ ও সরকারী ১ নং খাস খতিয়ানের জায়গা জবর দখল করে জেটি নির্মাণ করেছে। মগনামা উপকূলে দখলবাজদের করাল গ্রাসের কারণে দিনদিন প্যারাবন কমে আসছে। সামান্য প্যারাবন রয়েছে, যা এখন অত্বি সংকটে।

উপকূলীয় বনবিভাগের মগনামা বনবিট কর্মকর্তা হোসনে মোবারক চকরিয়া নিউজকে জানান, প্যারাবনের উজাড় করে জেটিটি আমার পূর্ববর্তী কর্মকর্তরা দায়িত্বে থাকাকালীন তৈরী করা হয়েছে। জেটিটি উচ্ছেদে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম উপকূলীয় বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গোলাম মওলার কাছে জানতে চাইলে তিনি চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘মগনামায় প্যারাবন উজাড়ের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে বন আইনে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্যারাবন ধ্বংসের জড়িত কাউকে ছাড় দেবে না বনবিভাগ।’

পাঠকের মতামত: